“আপনি তাহলে কোন পাথরেই বিশ্বাস করেন না?”

“নাহ, করি না।” 

মাতব্বর সাহেব বেশ কড়া ভাবেই না বলে চায়ে চুমুক দেন। মজিবর সাহেব খানিকটা থমকে যান। তিনি বেশ বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, সহসাই কেউ তাকে না বলে না। অনেকে ভদ্রতার খাতিরে অনিচ্ছা সত্ত্বেও হ্যাঁ বলে।

একটু রেগে গিয়ে মজিবর সাহেব বলেন, “এই পাথর আঙ্গুলে দেওয়ার পর থেকে আমি প্রতি সপ্তাহে আগের থেকে ২টা করে ট্রিপ বেশি পাইতেছি। তাও আপনার আমার কথা বিশ্বাস হইতেছে না?” 

মাতব্বর সাহেব আয়েস করে বিস্কুটে কামড় দিয়ে বলেন, “আমি ভাই পাথর-টাথরে বিশ্বাস করি না। আমি আমার ব্যবসা ডিজিটাল করুম, এইটাই ফাইনাল।” 

মজিবর সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাতব্বর সাহেব বাসায় যান। তার বন্ধু আলি জিম ডিজিটাল ট্রাকে রেজিস্ট্রেশন করে সারা বাংলাদেশে নিয়মতি ট্রিপ পাচ্ছে। তিনি কেন পাথর পরে বসে থাকবেন! 

বাসায় এসে তার বড় ছেলেকে ডেকে বলেন, “ফেসবুকে গিয়ে জিম ডিজিটাল ট্রাক বের করে ওদের নাম্বার আমাকে দে।” 

তিনি জিমের প্রতিনিধির সাথে কথা বলে বুঝতে পারেন, স্মার্ট ফোন ছাড়া এই অ্যাপ ইন্সটল করা যাবে না। তিনি হাল ছাড়ার পাত্র নন। তার ছেলেকে ডেকে বলেন জিম অ্যাপ ইন্সটল করতে। তার ছেলে  সাথে সাথেই জিমে রেজিস্ট্রেশন করে এবং পরদিন তাদের সবগুলো ট্রাক ও ড্রাইভারদেরও রেজিস্ট্রেশন করিয়ে ফেলে। 

মাতব্বর সাহেবের ট্রাক নিয়মিত নারায়ণগঞ্জ, কাচপুরের দিকে পণ্য সরবরাহ করা শুরু করেন। জিমে রেজিস্ট্রেশনের পর থেকে ট্রিপ একের পর এক আসছেই! মাতব্বর সাহেব এখন সারাক্ষণই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তবে সেটা কিন্তু স্মার্ট ফোন না। 

তার ফিচার ফোন নিয়ে! 

একটা ট্রিপ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি ড্রাইভার ও জিমের সাথে কানেক্টেড থাকেন। তার ছেলে ট্রিপে বিড করা থেকে শুরু করে অ্যাপ সংক্রান্ত কাজগুলো করে থাকে। অন্যদিকে মাতব্বর সাহেব ট্রিপ শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ফোন দিয়ে খোঁজ নেন। 

মাঝে একদিন তিনি একটা ট্রিপ পান যেখানে তিন জায়গায় পণ্য অ্যানলোড করতে হবে। একটি সিঙ্গেল ট্রিপে ৩টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পণ্য আনলোড করা চাট্টিখানি কথা না। তবে তিনি একটুও বিচলিত না হয়ে তার ড্রাইভারকে বিস্তারিত বুঝিয়ে বলেন। শুধু তাই না প্রতিটি স্থানে পণ্য আনলোডের পর তিনি জিমকেও ব্যাপারটা অবহিত করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তার ট্রাক তিন জায়গায় পণ্য আনলোড করে। 

ট্রিপ শেষ হতেই মাতব্বর সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। এমন সময় তার ছেলে ফোন দেয়। “বাবা নারায়ণগঞ্জ থেকে কারওয়ান বাজারে ট্রিপ আছে।” 

মাতব্বর সাহেব তো অবাক হয়ে যান। আগে ট্রিপের পিছনে দৌড়াতেন আর এখন ট্রিপই যেন তার পেছনে দৌড়াচ্ছে। তিনি ছেলেকে বলেন, ট্রিপ নিয়েই যাতে ট্রাক ফেরত আসে, কোন ট্রিপ তিনি মিস করতে চান না।   

ফোন রেখে মাতব্বর সাহেব হাসি মুখে মজিবর সাহেবের এজেন্সির দিকে যেতে থাকেন। তাকে আজকের ট্রিপের গল্পটা বলতে হবে, সাথে সাথে তার পাথরের গুণগানও শুনে আসা যাক। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।