কাঁধে গামছা নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছিলো মাসুম। এমন সময় পাশ থেকে তার বন্ধু জয়নাল বলে, “কিরে কোন ট্রিপ আছে নাকি?” 

মুখ থেকে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে মাসুম বলে, “স্ট্যান্ডে কিছু নাই।”

হাই তুলতে তুলতে জয়নাল বলে, “আমি অনলাইনে ট্রিপ পাইছি, একটু পরে বাইর হমু।”

মাসুম তাড়াতাড়ি নিজের মোবাইলের ইন্টারনেট চালু করে। মুহূর্তেই জিম অ্যাপ থেকে নোটিফিকেশন পায় বরিশালে ট্রিপ আছে। স্টিল যাবে বরিশাল সদরে। ১ ঘন্টা আগে ট্রিপটা তৈরি হয়েছে। সে দ্রুত বিড করে। এমন সময় তার হেল্পার জনি মিয়া ফোন দিয়ে জানায় ট্রাক ঠিকমতো স্টার্ট নিচ্ছে না। মাসুমের মেজাজ সাথে সাথেই বিগড়ে যায়।

চিটাগংরোডের ট্রাক স্ট্যান্ডে তার ট্রাক থাকে। স্ট্যান্ডে যেতে যেতেই সে বিডটি জিতে। কিন্তু মনে আনন্দের বদলে টেনশন নিয়ে সে স্ট্যান্ডে হাজির হয়। তার ট্রাক বেশ কয়েকবার চেষ্টার পর চালু হয়। তবে সমস্যা যে কিছু একটা হয়েছে সেটা মাসুম খুব ভালোই বুঝতে পারে। তাই সে দ্রুত মেকানিক ডেকে নিয়ে আসে। ট্রাক মেরামত করে মদনপুর স্টিল ডিপোতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল ৪টা বেজে যায় তার।

ডিপো আজকের মতো বন্ধ হয়ে গেছে!

মাসুম মনে মনে নিজেকে গালি দেয়। আজকে তার কপালটাই খারাপ। ট্রাকে সমস্যা হল একটু আগে আর এখন ডিপো বন্ধ! 

সে কাস্টমারকে কল করে সমস্যা বুঝিয়ে বলে। কাস্টমার জানায়, যদি কাল মালামাল লোড করে বরিশাল যায়, সেক্ষেত্রে একদিন পিছিয়ে যাবে। তাই পণ্য আনলোড বরিশাল সদরে করলে হবে না। সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে সুবিদখালীতে পণ্য নিয়ে যেতে হবে। মাসুম তাতেই রাজি হয়। সে ট্রিপটি মিস করতে চাচ্ছে না।

পরেরদিন যাতে সকাল সকাল সে পণ্য নিয়ে বরিশাল যেতে পারে সেজন্য রাতে ডিপোতেই থেকে যায়। পরদিন সকাল ৮টায় মাসুম পণ্য লোড করে বরিশালের উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে মাওয়া ঘাটে সে জ্যামে আটকে থাকে ২ ঘন্টা। মাথা ভর্তি টেনশন নিয়ে সে যখন ফেরীতে উঠে তখন দুপুর হয়ে গেছে।

“ভাই কি এতো চিন্তা করেন?”

মাসুম মাথা ঘুড়িয়ে তাকিয়ে দেখে অল্প বয়সী একটা ছেলে চা-সিগারেট বিক্রি করছে। সে এক কাপ চা নিয়ে একটা সিগারেট ধরায়। পদ্মা নদীর উত্তাল বাতাসে চায়ে চুমুক দিয়ে মাসুম কিছুটা আনমনা হয়ে যায়। সে গতকাল থেকে যা যা ঝামেলার মধ্য দিয়ে গিয়েছে তা ছেলেটাকে জানায়। ছেলেটা মাসুমকে বলে, “ধৈর্য ধইরা থাকেন ভাই। এমনও অনেক দিন যায় সারাদিন বৃষ্টি। এক কাপ চাও বেচতে পারি না।”

ছেলেটার কথা ভালো লাগে মাসুমের। মাওয়া ঘাট থেকে নেমে সে কোন তাড়াহুড়ো না করে ধীরে ধীরে গাড়ি চালায়। পরদিন বিকেল ৪ টায় সে সুবিদখালী গিয়ে পৌঁছায়। কাস্টমার পণ্য বুঝে নেওয়ার পর বাড়তি ৬০ কিলোমিটার হিসাব করে মাসুমকে টাকা দেয়। মাসুম মনে মনে খুব খুশি হয়।

আসলেই ধৈর্য ধরে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ফেরার পথে মাসুম জিমের মাধ্যমে ট্রিপ পায়। তার খালি ট্রাক নিয়ে ফিরতে হবে না ভেবেই মুখে হাসি ফুটে উঠে। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।